ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক-ইউনিট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক-ইউনিট:
![]() |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) |
বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সর্বাধিক সংখ্যক সাবজেক্ট অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক-ইউনিটে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স, ফার্মেসি, মাইক্রোবায়োলজি, ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং,ইইই,মৎস্য বিজ্ঞান, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফলিত রসায়ন, সমুদ্র বিজ্ঞান এর মতো সাবজেক্টগুলোর চাহিদা দেশের চাকুরীর বাজারে বেশ আকাশচুম্বী।
তোমাদের পূর্নাঙ্গ প্রস্তুতি সহায়ক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর এই ব্লগটিতে দেয়ার চেষ্টা করবো।
১. HSC পরীক্ষা এবং ভর্তি পরীক্ষার মূল পার্থক্য কী?
উত্তর: দুটো পরীক্ষার কিছু মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। প্রথমত, HSC পরীক্ষার সময় আমরা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের একটা সাজেশন পড়ি; কেউই সম্পূর্ণ বই ভালো করে পড়ি না। কিন্তু, ভর্তি পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ বা সাজেশন বলে কিছু নেই। তোমাকে পুরো বইটাই ভালো করে পড়তে হবে। প্রশ্ন আসতে পারে যেকোন অংশ থেকে।
দ্বিতীয় পার্থক্য হলো, প্রশ্নের ধরণে। HSC পরীক্ষায় অনেক থিওরি প্রশ্ন থাকে; সূত্র প্রমাণ করতে বলা হয়। ভর্তি পরীক্ষায় এধরণের তাত্ত্বিক প্রশ্ন কম আসবে। সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে গাণিতিক সমস্যার উপর। মুখস্ত উত্তর দেয়া যায় এমন প্রশ্ন অপেক্ষা বুঝে উত্তর দিতে হয় এমন প্রশ্নই ক-ইউনিটে বেশি আসবে। তাই, এখন থেকে সবকিছু পড়তে হবে বুঝে বুঝে।
তৃতীয় পার্থক্য হলো, প্রতিযোগিতা। HSC পরীক্ষায় একজনের সাথে আরেকজনের কোন প্রতিযোগিতাই নেই। জিপিএ-5.00 পাওয়া সবাই এখানে ফার্স্ট হয়েছে বলে ধরা হয়। কিন্তু, ভর্তি পরীক্ষায় মেরিট লিস্ট ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৭৫ সিটে নিজের অবস্থান পাকা-পোক্ত করতে হলে প্রথম ৩০০০ জনের মধ্যে স্থান লাভ করতে হবে। অধিক চাহিদার বিষয়ে পড়তে চাইলে প্রথম ৮০০ জনের মধ্যে থাকাটা ভালো। কত নম্বর পেলে ৮০০ জনের মধ্যে চান্স পাবে তার কোন উত্তর নেই। কোন বছর কেউ ৮০ পেয়ে প্রথম ১০০০ জনের মধ্যে চান্স পায়। আবার, কোন বছর কেউ ৯০ পেয়েও চান্স না-ও পেতে পারে। অর্থাৎ, পুরো ব্যাপারটাই তোমার প্রতিযোগী অন্যান্য শিক্ষার্থীদের উপর নির্ভর করে।
সুতরাং, ভর্তি পরীক্ষা ও HSC পরীক্ষা খুবই ভিন্ন বিষয়। একই প্রস্তুতি নিয়ে দুটো কভার করা যায় না। তবে, তাদের মধ্যে প্রায় ৭০% মিল আছে। বাকী ৩০% কীভাবে প্রস্তুতি নিবে সেটা এই পোস্টটি মন দিয়ে পড়লেই বুঝে যাবে।
২. শুরুটা কীভাবে করতে হবে?
উত্তর: যেকোন কিছুর শুরুটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই, শুরুর আগে একটা প্ল্যান করে নিতে হবে। প্ল্যানটা সবার জন্য এক হবে না। যারা HSC পরীক্ষায় অনেক পড়াশোনা করে এসেছো তারা এখন অপেক্ষাকৃত কঠিন গাণিতিক সমস্যা সমাধানে লেগে যাবে; সাথে সাথে পড়তে থাকবে বোর্ড বই।
কিন্তু, যারা আমার মতো HSC পরীক্ষায় ফাঁকি মেরে এসেছো তাদের কী হবে? তারা কি চান্স পাবে না? উত্তর হলো, আমি যেহেতু চান্স পেয়েছি সেহেতু তুমিও পেতে পারো। তার জন্য আমার কয়েকটা কথা মনোযোগ দিয়ে ফলো করবে। প্রথমত, পড়াটা শুরু করো বোর্ড বই দিয়ে। মনে করো, তুমি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। বইয়ের প্রতিটি পাতা সুন্দর করে পড়ে ফেলো। আগে বই না পড়ে কখনোই প্রশ্ন সলভ করতে যাবে না। নইলে, হতাশ হয়ে পড়তে পারো।
দ্বিতীয়ত, নিজেকে অন্যান্য বন্ধুদের সাথে তুলনা করো না। তোমার অনেক বন্ধু HSC-তেই সব পড়ে এসেছে। তুমি দৌড় শুরু করছো অনেক পড়ে। সে হয়তো ফার্স্ট হয়ে চান্স পাবে, তুমি হয়তো 500তম হয়ে ঢাবিতে চান্স পাবে। দুজনেই ভালো সাবজেক্টে পড়তে পারবে।
এমন লাইন দেয়া থাকবে যার ক্যালকুলেশন করা লাগে না
সুতরাং, নিজেকে সবকিছু পড়ে আসা বন্ধুদের সাথে তুলনা করতে যাবে না। করলে হতাশ হয়ে পড়বে। আব্বু-আম্মুকে বোঝাও যাতে কথায় কথায় না বলে, “তোর সারা জীবনের ভালো বন্ধু ১০০ পায় আর তুমি কেন ৩০ পাস?” প্রতিটি মানুষ ভিন্ন। তাদের প্রস্তুতিও হবে ভিন্ন।
তৃতীয়ত, নিয়মানুবর্তিতা খুব দরকার। একদিন ১২ ঘণ্টা পড়ে পরের ৫ দিন গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়ালে চলবে না। প্রস্তুতি নিতে হবে প্রতিদিন। HSC পরবর্তী তিন মাসে প্রতি দিন ৫ ঘণ্টা করে পড়লেও ৫×৯০= ৪৫০ ঘণ্টা পড়াশোনা করা হয়ে যাবে।
সুতরাং, চাইলেই তুমি প্রথম থেকে পড়া শুরু করেও সবকিছু কভার করতে পারবে। সেজন্য দরকার কঠোর পরিশ্রম ও মনোবল। বিশ্বাস রাখো “আমি পারবোই”।
৩. বোর্ডের পাঠ্যবইগুলো পড়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: প্রস্তুতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে বোর্ড বই পড়া। কেউ যদি শুধু বোর্ড বইগুলো ১০০% পড়ে ফেলে তাহলে সে চান্স পাবে তা গ্যারান্টি সহকারে বলে দেয়া সম্ভব। তাই, পড়াটা শুরু করবে বোর্ড বই দিয়ে। অযথা বাজার থেকে কিনে আনা গাইড বইগুলো নিয়ে প্রথমেই মাথা নষ্ট করতে যাবে না।
৪. বাজারে অনেক লেখকের বই পাওয়া যায়। কোনটা অনুসরণ করা উচিত?
উত্তর: এই প্রশ্নটি প্রায় সবাই করে থাকে। উত্তরটা খুবই সহজ। তুমি HSC পরীক্ষার জন্য যে বইটা পড়ে এসেছো সেটাই পড়বে। ধরো, তুমি রসায়নে সঞ্জিত কুমার গুহের বই পড়ে এসেছো। এখন, বন্ধুদের কথা শুনে নতুন করে কবির স্যারের বই কিনে পড়তে গেলে কিন্তু হারিয়ে যেতে পারো। তাই, নিজের সুপরিচিত বইটাই আবার ভালো করে ১০০% পড়ে ফেলো। কোন আনাচে-কানাচে বাদ থাকা যাবে না। পড়তে পড়তে বইটা ছিঁড়ে যাবে। তখনই বুঝবে ভালো প্রস্তুতি হচ্ছে। নতুন চকচকে বই হাতে নিয়ে এখন পড়া শুরু করলে শেষ করতে পারবে না।
এখন প্রশ্ন হবে, তাহলে একটা বইতে যে টপিকগুলো নেই সেগুলো কীভাবে শিখবো? উত্তর হলো, সেগুলো পরে প্রশ্ন সলভ করতে করতে শিখে যাবে। ১০০% প্রিপারেশন নেয়া কখনোই হয়তো সম্ভব হবে না। অন্তত ৯০% প্রিপারেশনটা তাই সুপরিচিত বোর্ডবই থেকেই নিয়ে নাও।
৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত তথ্যগুলো কোথায় পাবো?
উত্তর: ভর্তি সংক্রান্ত তথ্যের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পোর্টাল (www.admission.eis.du.ac.bd) টি ঘুরে দেখো।
৬. বিগত বছরের প্রশ্ন সলভ করা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: এটি ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির একটা বড় অংশ। বিগত বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন সলভ করলে প্রায় ৫০% প্রস্তুতি নেয়া হয়ে যাবে।
৭. ক্যালকুলেটর ব্যতীত কীভাবে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করবো?
উত্তর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক-ইউনিটে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যায় না। তাই, সব যোগ-বিয়োগ করতে হবে হাতে কলমে। তবে, কাজটা যতটা কঠিন মনে হচ্ছে ততটা কঠিন নয়। ধরো তুমি 0.003M ঘনমাত্রার HCl এর pH বের করতে চাও। উত্তরটা হবে -log(0.003)। কিন্তু, এইটা বের করতে তো ক্যালকুলেটর লাগবে! হতাশ হবার কারণ নেই! MCQ এর অপশন গুলো লক্ষ্য করলেই দেখবে —
ক. -log(0.006)
খ. -log(0.003)
গ. -log(0.003*3)
ঘ. log(0.003)
খ. -log(0.003)
গ. -log(0.003*3)
ঘ. log(0.003)
সঠিক উত্তর খ
দেখলে? অপশনেও এমন লাইন দেয়া থাকবে যার ক্যালকুলেশন করা লাগে না। তবে বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করতে গিয়ে সাবধান থাকবে। 2014 সালের পূর্বে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যেতো। তাই, 2011 সালের প্রশ্ন সলভ করতে গিয়ে হতাশ হওয়া যাবে না। মনে রেখো, তোমার প্রশ্ন গুলো হবে 2015/2014 এর ভর্তি পরীক্ষাগুলোর মতো। তাই, সেই প্রশ্ন গুলোকেই মডেল মনে করবে। অযথা, নিজ সিলেবাসের বাইরের টপিক নিয়ে মাথা গরম করবে না।
৮. HSC পরবর্তী তিনমাসে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করতে হবে?
উত্তর: কয়েকটি ধাপে নিজের দৈনিক প্রস্তুতিটি নিতে হবে। প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি টপিক পড়ার জন্যই এই ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:
Step-01: বোর্ডের পাঠ্যবইয়ের অধ্যায়টি ভালো করে পড়া
Step-02: সময়মত টেন মিনিট স্কুলের লাইভ ক্লাসে অংশ নেয়া
Step-03: টেন মিনিট স্কুলের একাডেমিক ভিডিওগুলো দেখে বেসিক পরিষ্কার করে নেওয়া
Step-04: বই এবং ভিডিওর সাহায্য নিয়ে নিজে নোট তৈরি করা
Step-05: বিগত বছরের প্রশ্ন সলভ করা
Step-06: যতবেশি পারো MCQ মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করা
Step-07: প্রতিটি পরীক্ষায় ভুল করা প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি বের করা
Step-02: সময়মত টেন মিনিট স্কুলের লাইভ ক্লাসে অংশ নেয়া
Step-03: টেন মিনিট স্কুলের একাডেমিক ভিডিওগুলো দেখে বেসিক পরিষ্কার করে নেওয়া
Step-04: বই এবং ভিডিওর সাহায্য নিয়ে নিজে নোট তৈরি করা
Step-05: বিগত বছরের প্রশ্ন সলভ করা
Step-06: যতবেশি পারো MCQ মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করা
Step-07: প্রতিটি পরীক্ষায় ভুল করা প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি বের করা
মনে রেখো, ভর্তি পরীক্ষা বেশ কঠিন একটা সময়। পড়াশোনার চাপের সাথে সাথে এ সময়টাতে মানসিক চাপটি থাকে প্রবল। সবসময়ই মনের ভেতর বিশ্বাস রাখতে হবে যে “আমি পারবোই”। এই আশা জিনিসটা বড় ভালো। মনে রাখবে, Hope is a Good Thing. May be the best of things. And no good thing ever dies.
No comments
New comments are not allowed.